ইনসুলিন ডক্টর: ড. প্রদীপ জামনাদাস

সারা বিশ্বে মৃত্যুর প্রধান কারণ হৃদরোগ—এই তথ্যটি আমাদের প্রায় সকলেরই জানা। কিন্তু আমরা প্রায়শই কোলেস্টেরল বা রক্তচাপের মতো পরিচিত শত্রু নিয়ে চিন্তিত থাকি, আর আসল বিপদটি আমাদের চোখের আড়ালেই থেকে যায়। বিশ্বের অন্যতম সেরা কার্ডিওলজিস্ট ডক্টর প্রদীপ জামনাদাসের মতে, হৃদরোগের মূল কারণ হলো এক নীরব ঘাতক: দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ (chronic inflammation)। এই প্রদাহই আমাদের ধমনীর ভেতরে লুকিয়ে থাকা ফলকগুলোকে (plaque) বিপজ্জনকভাবে ফাটিয়ে দেয়।

ডক্টর জামনাদাস তাঁর কর্মজীবনে আড়াই লক্ষেরও বেশি রোগীর চিকিৎসা করেছেন এবং দেখেছেন কীভাবে আমাদের প্রতিদিনের সাধারণ অভ্যাস, তথাকথিত “স্বাস্থ্যকর” খাবার এবং বাড়ির ভেতরের অদৃশ্য উপাদানগুলো এই মারাত্মক প্রদাহকে উস্কে দেয়। এই প্রবন্ধে আমরা তাঁর অভিজ্ঞতা থেকে পাওয়া এমন কিছু আশ্চর্যজনক শিক্ষা তুলে ধরব, যা হৃদরোগ প্রতিরোধের প্রচলিত ধারণাকে আমূল বদলে দেবে এবং আপনাকে এর আসল শত্রুকে চিনতে সাহায্য করবে।

শিক্ষা ১: পেটের মেদ একটি সতর্ক সংকেত, এবং ক্যালোরি গণনা এর সেরা সমাধান নয়

যখন পেটের মেদ বা ভুঁড়ির কথা আসে, তখন বুঝতে হবে এটি কেবল সৌন্দর্যের বিষয় নয়, এটি একটি গুরুতর স্বাস্থ্য ঝুঁকির লক্ষণ। ডক্টর জামনাদাসের মতে, পেটের চারপাশে জমা হওয়া এই চর্বি, যা ভিসারাল ফ্যাট নামে পরিচিত, তা শরীরের ভেতরে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের চারপাশে জমা হয়। এটি অত্যন্ত বিপজ্জনক কারণ এই চর্বিটি প্রদাহ সৃষ্টিকারী অণুতে (inflammatory molecules) পরিপূর্ণ, যেমন “ইন্টারলিউকিন-৬” এবং “টিউমার নেক্রোসিস ফ্যাক্টর”। এটি উচ্চ ইনসুলিন মাত্রারও একটি স্পষ্ট লক্ষণ।

ইনসুলিন একটি “সংরক্ষক হরমোন” (storage molecule) হিসেবে কাজ করে, যা রক্ত থেকে অতিরিক্ত গ্লুকোজকে চর্বি হিসেবে জমিয়ে রাখে, বিশেষ করে পেটের ভিসারাল ফ্যাট হিসেবে। যখন ইনসুলিনের মাত্রা সারাক্ষণ উঁচু থাকে, তখন ওজন কমানো প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে।

এর পেছনের প্রক্রিয়াটি বেশ সহজ কিন্তু মারাত্মক:

• যখন আমরা ঘন ঘন কার্বোহাইড্রেট এবং চিনি খাই, তখন রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য আমাদের শরীরে ইনসুলিনের মাত্রা সবসময় উঁচু থাকে।

• ক্রমাগত উঁচু মাত্রার কারণে শরীর ইনসুলিনের প্রতি রেজিস্ট্যান্ট বা প্রতিরোধী হয়ে ওঠে।

• ফলে, অগ্ন্যাশয় (pancreas) রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে আরও বেশি পরিমাণে ইনসুলিন তৈরি করতে শুরু করে।

• এই দীর্ঘস্থায়ী উচ্চ ইনসুলিনের অবস্থাকেই (হাইপারইনসুলিনিমিয়া) ডাঃ জামনাদাস আসল সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। ডায়াবেটিস নির্ণয়ের অনেক আগেই এটি শরীরে ভিসেরাল ফ্যাট জমাতে শুরু করে।

ডাঃ জামনাদাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণ হলো:

“যখন আপনার ডায়াবেটিস ধরা পড়ে… তার আগেই আপনার শরীরে ১০ বছর ধরে হাইপারইনসুলিনিমিয়া (উচ্চ ইনসুলিন) চলছে… আপনাকে ডায়াবেটিক হিসেবে চিহ্নিত করার সময়ের মধ্যেই, আপনার করোনারি আর্টারি ডিজিজ হয়ে গেছে।”

সাধারণভাবে ক্যালোরি কমালে শরীর চর্বির পাশাপাশি পেশীও হারাতে পারে। কিন্তু উপবাস বা ফাস্টিং বিশেষভাবে ভিসারাল ফ্যাটকে প্রথম নিশানা করে, কারণ এটি ইনসুলিনের মাত্রা কার্যকরভাবে কমিয়ে আনে।

ডক্টর জামনাদাস বলেন:

“…১২ ঘণ্টা পর শরীর চর্বি গলাতে শুরু করে। এবং প্রথম যেখান থেকে চর্বি বেরোতে শুরু করে, তা হলো ভিসারাল ফ্যাট।”

এর কারণ হলো, আমাদের আধুনিক ঘন ঘন খাওয়ার অভ্যাস শরীরকে তার স্বাভাবিক উপবাসের অবস্থা থেকে বঞ্চিত করেছে, যার ফলে প্রদাহ সৃষ্টিকারী এই ভিসারাল ফ্যাট কমানো কঠিন হয়ে পড়েছে।

শিক্ষা ২: “কার্ডিও” নিয়ে নতুন ভাবনা—অতিরিক্ত অ্যারোবিক ব্যায়াম কেন ক্ষতিকর হতে পারে

আমরা অনেকেই মনে করি যে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দৌড়ানো বা ম্যারাথনের মতো দীর্ঘ অ্যারোবিক ব্যায়াম হার্টের জন্য সবচেয়ে ভালো। কিন্তু ডক্টর জামনাদাসের অভিজ্ঞতা সম্পূর্ণ ভিন্ন কথা বলে। তিনি দেখেছেন যে যারা অতিরিক্ত অ্যারোবিক ব্যায়াম করেন, তাদের মধ্যে করোনারি আর্টারি ডিজিজ বা ধমনীতে ব্লকেজ হওয়ার প্রবণতা বেশি।

এর পরিবর্তে, তিনি হার্টের স্বাস্থ্যের জন্য নিম্নলিখিত ধরনের ব্যায়ামের পরামর্শ দেন:

• স্বল্প-মেয়াদী অ্যারোবিক (Limited Aerobics): Endurance-এর জন্য মাত্র ১৫-২০ মিনিট।

• প্রতিরোধ ব্যায়াম (Resistance Exercises): শরীরের নিজস্ব ওজন ব্যবহার করে (যেমন প্ল্যাঙ্ক, লেগ লিফট)।

• হিট (HIIT – High-Intensity Interval Training): ৩০-৪৫ সেকেন্ডের তীব্র ব্যায়াম এবং এরপর ৩০-৪৫ সেকেন্ডের সম্পূর্ণ বিশ্রাম।

সাপ্লিমেন্ট: কোনটি এড়িয়ে চলবেন এবং কোনটি জরুরি

ডাঃ জামনাদাস তার সমস্ত কার্ডিয়াক রোগীদের ক্যালসিয়াম সাপ্লিমেন্ট নেওয়া বন্ধ করার পরামর্শ দেন।

তার যুক্তি হলো, সমস্যাটি ক্যালসিয়ামের অভাব নয়, বরং ভিটামিন D3 (ক্যালসিয়াম শোষণের জন্য) এবং ভিটামিন K2-এর অভাব। ভিটামিন K2 নিশ্চিত করে যে ক্যালসিয়াম ধমনীতে জমা না হয়ে হাড়ে পৌঁছায়।

ডক্টর জামনাদাসের ভাষায়:

“আমি দেখেছি যারা অতিরিক্ত অ্যারোবিক ব্যায়াম করেন… তাদের মধ্যে করোনারি আর্টারি ডিজিজ হওয়ার প্রবণতা সেই সব রোগীদের চেয়ে বেশি, যারা স্বল্প সময়ের স্প্রিন্ট এবং রেজিস্ট্যান্স ব্যায়াম করেন।”

শিক্ষা ৩: কিছু “স্বাস্থ্যকর” অভ্যাস যা আপনার হার্টের ক্ষতি করতে পারে

আমরা অনেক কিছুকেই স্বাস্থ্যকর বলে মনে করি, কিন্তু সেগুলোই হয়তো আমাদের হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে এবং শরীরে প্রদাহ সৃষ্টি করছে। নিচে এমন কিছু প্রচলিত ভুল ধারণা তুলে ধরা হলো:

অতিরিক্ত ফল খাওয়া: ফল স্বাস্থ্যকর হলেও, অতিরিক্ত ফল খাওয়া ক্ষতিকর। ফলের মধ্যে থাকা ফ্রুক্টোজ (fructose) অতিরিক্ত পরিমাণে শরীরে গেলে তা ফ্যাটি লিভার এবং অন্যান্য বিপাকীয় সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে, যা প্রদাহের জন্ম দেয়। ফল খেতে হবে পরিমিত পরিমাণে এবং মৌসুম অনুযায়ী।

সাদা ভাতের ঝুঁকি: আধুনিক সাদা চালে আর্সেনিকের মতো বিষাক্ত পদার্থ থাকতে পারে। ডক্টর জামনাদাস আর্সেনিককে একটি “বিষ” হিসেবে উল্লেখ করেছেন, যা “ট্রু ক্রাইম” গল্পে কাউকে ধীরে ধীরে হত্যা করার জন্য ব্যবহৃত হয়। তিনি চালকে নিরাপদ করার এবং “রেজিস্ট্যান্ট স্টার্চ” তৈরি করে ইনসুলিনের প্রভাব কমানোর জন্য একটি তিন-ধাপের প্রক্রিয়া বর্ণনা করেছেন:

    1. ভাত সারারাত ভিজিয়ে রেখে সেই জল ফেলে দিন।

    2. প্রচুর জল দিয়ে ভাত রান্না করুন এবং মাড় ফেলে দিন।

    3. ভাত ফ্রিজে ঠান্ডা করে পরের দিন গরম করে খান।

এই পদ্ধতিতে ভাতের শ্বেতসার ‘রেজিস্ট্যান্ট স্টার্চ’-এ পরিণত হয়, যা সহজে হজম বা শোষিত না হয়ে অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়ার খাবারে পরিণত হয়। ফলে, এটি রক্তে শর্করার মাত্রা এবং ইনসুলিনের ওপর সাধারণ ভাতের মতো ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে না।

ক্যালসিয়াম সাপ্লিমেন্ট: ডক্টর জামনাদাস স্পষ্টভাবে বলেছেন যে ক্যালসিয়াম সাপ্লিমেন্ট কার্ডিওভাসকুলার রোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে এবং এটি গ্রহণ করা বন্ধ করা উচিত। আসল সমস্যা ক্যালসিয়ামের অভাব নয়, বরং ভিটামিন D3 এবং K2-এর অভাব। এর কার্যকারিতাটি বোঝা জরুরি: ভিটামিন D3 শরীরকে ক্যালসিয়াম শোষণ করতে সাহায্য করে, আর ভিটামিন K2 সেই শোষিত ক্যালসিয়ামকে হাড়ের দিকে চালনা করে এবং ধমনীতে জমতে বাধা দেয়। এই চালনার অভাবে ক্যালসিয়াম ধমনীতে জমে প্রদাহ সৃষ্টি করে।

ভেজিটেবল সিড অয়েল: এই তেলগুলোতে ওমেগা-৬ ফ্যাটি অ্যাসিডের পরিমাণ অনেক বেশি থাকে। শরীরে ওমেগা-৬ এবং ওমেগা-৩-এর ভারসাম্যহীনতা মারাত্মক প্রদাহের সৃষ্টি করে, যা হৃদরোগের অন্যতম মূল কারণ। ডাঃ জামনাদাস রান্নার জন্য নিম্নলিখিত তেলগুলো ব্যবহারের পরামর্শ দেন:

  • • অতিরিক্ত ভার্জিন অলিভ অয়েল (Extra Virgin Olive Oil) (শুধুমাত্র সালাদের জন্য)
  • • মাখন (Butter)
  • • ঘি (Ghee)
  • • নারকেল তেল (উচ্চ তাপমাত্রায় রান্নার জন্য)

শিক্ষা ৪: আপনার বাড়ি এবং অন্ত্রের ভেতরের অদৃশ্য হুমকি

অনেক সময় হৃদরোগের কারণ আমাদের চোখের সামনে থাকে না, বরং লুকিয়ে থাকে আমাদের পরিবেশ এবং শরীরের ভেতরে, যা নীরবে দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ তৈরি করে চলে।

ছত্রাক বা মোল্ড (Mold): এটি একটি মারাত্মক কিন্তু উপেক্ষিত বিষাক্ত পদার্থ। এক আশ্চর্যজনক তথ্য হলো, প্রায় ৭০% বাড়িতে কোনো না কোনো ধরনের মোল্ড থাকে। এর স্পোর নিঃশ্বাসের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে একটি দীর্ঘস্থায়ী সিস্টেমিক প্রদাহজনক প্রতিক্রিয়া (systemic inflammatory reaction) তৈরি করতে পারে, যা সরাসরি কার্ডিওভাসকুলার স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করে।

লিকি গাট (Leaky Gut): এটি এমন একটি অবস্থা যেখানে অন্ত্রের ভেতরের প্রাচীর ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর ফলে, অন্ত্রের ভেতরে থাকা ব্যাকটেরিয়ার ক্ষতিকর অংশ, যা লিপোপলিস্যাকারাইডস (lipopolysaccharides) নামে পরিচিত, রক্তে মিশে যায়। এই কণাগুলো সরাসরি লিভারে পৌঁছে প্রদাহ এবং ফ্যাটি লিভার তৈরি করে। ডক্টর জামনাদাসের মতে, এটি একটি মহামারী, কারণ “জনসংখ্যার অন্তত ২৫% এখন ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত,” যা হৃদরোগের একটি প্রাথমিক ধাপ। এই বিষয়গুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ মানুষ সাধারণত ছত্রাক বা হজমের সমস্যাকে হার্ট অ্যাটাকের সাথে যুক্ত করে না, কিন্তু এগুলোর প্রভাব সুদূরপ্রসারী।

ডাঃ জামনাদাসের বর্ণিত কারণ ও ফলাফলের শৃঙ্খলটি নিচের টেবিলে দেখানো হলো:

কারণ (Cause)ফলাফল (Effect)
দুর্বল গাট মাইক্রোবায়োম (Poor Gut Microbiome)অন্ত্রের আস্তরণ ক্ষতিগ্রস্ত হয় (Leaky Gut)
টক্সিন রক্তে প্রবেশ করে (Toxins enter blood)ফ্যাটি লিভার এবং প্রদাহ (Fatty Liver & Inflammation)
দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ (Chronic Inflammation)করোনারি আর্টারি ডিজিজ (Coronary Artery Disease)

তিনি একজন ৬০ বছর বয়সী “সুস্থ” রোগীর উদাহরণ দেন, যিনি সবকিছু সঠিকভাবে পালন করা সত্ত্বেও তার করোনারি ক্যালসিয়াম স্কোর অনেক বেশি ছিল। ডাঃ জামনাদাস এর কারণ হিসেবে তার আজীবনের দুর্বল গাট মাইক্রোবায়োমকে দায়ী করেন।

শিক্ষা ৫: মাত্র এক রাতের ঘুমের অভাবের তাৎক্ষণিক বিপদ

আমাদের জীবনযাত্রার একটি সাধারণ কিন্তু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো ঘুম। এর অভাব কতটা মারাত্মক এবং তাৎক্ষণিক প্রভাব ফেলতে পারে, তা ডক্টর জামনাদাসের একটি উক্তিতেই স্পষ্ট।

“…এক রাতের খারাপ ঘুম আপনাকে পরের দিনই ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্ট করে তোলে।”

ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স হলো এমন একটি অবস্থা যেখানে শরীরের কোষগুলো ইনসুলিনের প্রতি সঠিকভাবে সাড়া দেয় না। এর পরিণতি মারাত্মক: শরীরকে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে অনেক বেশি ইনসুলিন তৈরি করতে হয়। এই অতিরিক্ত ইনসুলিন, যেমনটা আমরা আগেই জেনেছি, গ্লুকোজকে লিভারে ঠেলে দেয় এবং বিপজ্জনক ভিসারাল ফ্যাট জমাতে সাহায্য করে, যা প্রদাহের একটি প্রধান উৎস। মাত্র এক রাতের অপর্যাপ্ত ঘুম যদি আমাদের শরীরকে এমন একটি বিপজ্জনক অবস্থার দিকে ঠেলে দিতে পারে, তবে দীর্ঘমেয়াদী ঘুমের অভাবের পরিণতি কতটা ভয়াবহ হতে পারে, তা সহজেই অনুমেয়। এটি প্রমাণ করে যে আমাদের ছোট ছোট দৈনন্দিন সিদ্ধান্তগুলোও বিপাকীয় স্বাস্থ্যের উপর কতটা গভীর প্রভাব ফেলে।

সুস্থ হার্টের জন্য কার্যকরী পদক্ষেপ

ডাঃ জামনাদাসের সাক্ষাৎকার থেকে প্রাপ্ত মূল পরামর্শগুলোকে নিম্নলিখিত কার্যকরী পদক্ষেপে সংক্ষিপ্ত করা যেতে পারে:

1. ফাস্টিং শুরু করুন (Embrace Fasting): এটি ইনসুলিনের মাত্রা কমিয়ে ভিসেরাল ফ্যাট কমাতে সবচেয়ে কার্যকরী উপায়।

2. আপনার গাটকে সুস্থ রাখুন (Fix Your Gut): প্রদাহের মূল কারণ দূর করতে ফাইবার এবং ফার্মেন্টেড খাবার খান।

3. সঠিক ব্যায়াম বাছুন (Choose the Right Exercise): অতিরিক্ত অ্যারোবিক ব্যায়াম এড়িয়ে চলুন এবং রেজিস্ট্যান্স ও HIIT-কে গুরুত্ব দিন।

4. লুকানো বিষ থেকে সাবধান থাকুন (Beware of Hidden Toxins): আপনার রান্নাঘর এবং বাড়িতে থাকা মোল্ড, ভেজিটেবল অয়েল এবং আর্সেনিকের মতো বিষাক্ত পদার্থ সম্পর্কে সচেতন হন।

5. পর্যাপ্ত ঘুমান (Get Enough Sleep): মনে রাখবেন, মাত্র এক রাতের অপর্যাপ্ত ঘুমও পরের দিন আপনাকে ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্ট করে তুলতে পারে।

উপসংহার: আপনার শরীরের প্রদাহকে নিয়ন্ত্রণ করুন

এই আলোচনা থেকে সবচেয়ে বড় শিক্ষা হলো, হৃদরোগ প্রতিরোধের চাবিকাঠি হলো আমাদের খাদ্যাভ্যাস, জীবনযাত্রা এবং পরিবেশের মধ্যে লুকিয়ে থাকা দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহের (chronic inflammation) উৎসগুলো খুঁজে বের করা এবং সেগুলোকে দূর করা। ধমনীর ভেতরে জমে থাকা ফলক বা প্লাক আসলে একটি “প্রদাহযুক্ত ব্রণ”-এর মতো। যখন শরীরে প্রদাহের মাত্রা বেড়ে যায়, তখন এই ব্রণটি ফেটে যেতে পারে, যার ফলে রক্ত জমাট বেঁধে হার্ট অ্যাটাক ঘটায়।

সুতরাং, ভিসারাল ফ্যাট কমানো, সঠিক ধরনের ব্যায়াম করা, “স্বাস্থ্যকর” খাবারের ভুল ধারণা থেকে বেরিয়ে আসা, মোল্ড বা লিকি গাটের মতো অদৃশ্য শত্রুদের মোকাবেলা করা এবং পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করা—এই সবগুলোই সেই প্রদাহ কমানোর একেকটি শক্তিশালী উপায়। আপনার স্বাস্থ্যের প্রতি একটি সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করার মাধ্যমেই আপনি হৃদরোগের আসল কারণগুলোকে जड़ থেকে নির্মূল করতে পারবেন।

আপনার স্বাস্থ্যকে নীরবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে, এমন কোন লুকানো হুমকিটি আপনি আজ থেকে মোকাবেলা শুরু করবেন?

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *