বাংলাদেশ রিডসের প্রথম মিলমেলা-২০২৪
বইপ্রেমীদের সকল অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে ১০ ই ফাল্গুন ১৪৩০ (২৩শে ফেব্রুয়ারি ২০২৪, শুক্রবার) অনুষ্ঠিত হয় বহুল প্রতীক্ষিত বাংলাদেশ রিডস এর মিলমেলা।
ফাল্গুনের সকালে বাংলাদেশ রিডস এর মিলমেলায় আমরা সাহিত্যের বিষয়ে আলোচনা হয়, লেখকের কথা শুনা হয়, আর সাহিত্যিক বিষয়ে নানা মন্তব্য জানার সুযোগ আসে প্রিয় লেখকের কাছ থেকে।
মিলনমেলায় আড্ডা, খাওয়া-দাওয়া, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও গেমসসহ ছিল আরো অনেক চমক। এটি একটি অমূল্য অভিজ্ঞতা হিসেবে থেকে যাবে স্মৃতির পাতায়। এই মিলমেলায় উপস্থিতি ছিল সকলের জন্য অত্যন্ত আনন্দময় ও গৌরবের।

একনজরে বাংলাদেশ রীডস বইপ্রেমীদের মিলমেলা ২০২৪
তারিখঃ ২৩শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ শুক্রবার
সময়ঃ সকাল ৯ঃ০০টা থেকে দুপুর ১২:৩০
স্থানঃ বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র মিলনায়তন
অনুষ্ঠান ধারাবাহিকতা:
সঞ্চালনা
Irin Akter Shuchana ও Nishan Wahid এর সঞ্চালনায় বাংলাদেশ রিডস এর প্রথম মিলমেলা শুরু হয় ।
জান্নাতুল ফিরদৌস সারা:
মিথুন দাস কাব্যের হাত ধরে ২০২৩ জুলাই শেষ সপ্তাহে বাংলাদেশ রিডস জন্ম এবং ঢাকার বাইরে অনেক জেলায় বেড়ে ওঠার গল্প শোনান । তুলে ধরেন কিভাবে ব্যাকুলতার সাথে শুক্রবারের জন্য অপেক্ষা করেন এই পরিবারের সাথে দেখা করার জন্য, নিরবে বই পড়ার জন্য।
মো. আমির হোসেন:
বাংলার ছাত্র, সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. আমির হোসেন মিলমেলা সঠিক লেখায় ভূয়সী প্রসংশা করেন। তুলে ধরেন হুমায়ুন আহমেদের মতো তার নিভৃতচারী জীবনের নানান প্রসঙ্গ, কিভাবে উনি নাটকে অনেক কিছুই বলালেও নিজের মুখে কিছু বলেননি। তার অন্যতম কিছু প্রসঙ্গ:
- ক্রেতা এবং পাঠক এক নয়। ক্রেতা অনেক, পাঠক কম।
- না লিখে সমালোচনা করা সমীচীন নয়।
- কোন কাজে কেউ সমালোচনা করলে পরেরবার তাকে সে কাজের দায়িত্ব দেওয়া ।
- অনেক বিখ্যাত লেখক কলম যোদ্ধা থেকে লেখক হয়েছেন।
- সবার উপরে মানুষ সত্য, ভিন্ন মত কে মেনেই চলতে হবে।
- বীক্ষণ-Experiment আর দেখা-Look এক নয়
- হাম্বরা ভাবা কিংবা হাহুতাশ করার কিছু নেই।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বহুমুখী প্রতিভার এক শিল্পী জানালেন অনেক রত্নখনি আছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়, তুলে ধরেন বই পড়ার উপকারিতা, বলেন মোবাইল আসক্তি কমাতে বই অপরিহার্য ।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলার শিক্ষক অদৈত মল্লবর্মনের এলাকার মাটি কপালে মাখেন, তার লেখা ৮ ভাষায় অনুদিত হয়। নবীনগরের অনেকেই ওস্তাদ আলাউদ্দিনকে চেনেন না, বই পড়ুয়ারা কিন্তু ঠিকই চেনেন।
নুসরাত জাহান জারিনঃ
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার লেখিকা, বাচিকশিল্পী নুসরাত জাহান জারিন তার গুরুকে রিডস এর পরিবেশ দেখাতে আমন্ত্রণ জানিয়ে আনেন।
কারো না কারো হাত ধরে এগোতে হয়, চলার পথ সহজ হয়। তিতাস নিয়ে স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি করে সবার মন কাড়েন।
মারিয়া আক্তার:
নাজিম হিকমতের কবিতা আবৃত্তি করে সবাইকে বিমোহিত করেন।
মোঃ সজিব মিয়া
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সজীব ভাই জানালেন কিভাবে টিভিতে রিডসের কার্যক্রম দেখে অনুপ্রাণিত হন, সবার জন্য বই পড়ার গুরুত্ব বুঝে রিডসের কার্যক্রম ভালোবেসে যুক্ত থাকায় আগ্রহী ।
ফারজানা ববিঃ
সময়ের জনপ্রিয় থ্রিলার লেখিকা, আবৃত্তি শিল্পি ও মানবজমিনের সাংবাদিক ফারজানা ববি তুলে ধরেন তার ২০১৪ থেকে লেখালেখি, ৫ টি বইয়ের কথা। শিক্ষক পরিবারের সাহিত্যানুরাগী পারিবারিক আবহে ছোটবেলা থেকেই তিনি সাহিত্যের প্রতি আগ্রহী। পড়াশোনার পাশাপাশি নিয়মিত বিভিন্ন পত্রিকা ও ম্যাগাজিনে লেখালেখি করেছেন। লেখালেখিকে ভালোবেসে শিক্ষা জীবনেই জড়িয়ে পড়েন সাংবাদিকতায়।
তার সংগ্রামের তেমন কোন গল্প না থাকা ভয়ের ব্যাপার হিসেবে উল্লেখ করে এরকম মসৃণ জীবন কামনা করেন। তিনি বিশ্বাস করেন পার্কে বসে বই পড়াটা বিনোদনেরও। তারপর আবৃত্তি করেন বিখ্যাত কবিতা- কেউ কথা রাখেনি ।
গান
মীমের গান আয়োজনে নিয়ে আসে নতুন দ্যোতনা।
আজমল হোসেন শুভসহ আরও কয়েকজন মিলে আরেকটি গানের আয়ােজন নিয়ে সবাইকে মাতিয়ে তোলেন।
সঞ্চালনায় নতুনত্ব
আজমল হোসেন শুভ ও পিপাস সঞ্চালনায় আসেন নতুনরূপে, বৈচিত্র্য আসে আয়োজনে।

মাইনুল ইসলাম মানিকঃ
ইলিশের বাড়ি চাঁদপুরের কবি ও অনুবাদক মাইনুল ইসলাম মানিক নিজেকে মূলত ভালো পাঠক ভাবেন, কোন বিদেশি বই ভালো লাগলে অনুবাদ করেন। ইউরোপের লোকজন বই পড়ায় অভ্যস্ত, আমাদের অভ্যাস কম। ভালো বই পড়াটা খুবই অর্থবহ বলে মনে করেন তিনি ।
বই পড়ার সময় স্ত্রীর বিড়াল ধরার অনুরোধ-হোটেল ওয়েটার বিড়াল এনে দেয়ার গল্পের মাধ্যমে তলে ধরা যায় পুরুষদের কর্পোরেট মনোভাব; স্ত্রী সন্তান প্রত্যাশী – পুরুষ পরপুরুষ ঘরে আনে- যেমন হোটেল ওয়েটার। তাই লেখার আসল অর্থ বুঝতে পারাটা অতি গুরুত্বপূর্ণ । তাইতো ঘরে ফেরা পাখি, প্রাণী, মানুষ সবই এক।
ভালো বই পাঠকদের সাজেস্ট করতে রিডসকে ভূমিকা রাখতে বলেন তিনি কারণ জ্ঞান মারাত্মক ভাবে প্রতিশোধ নেয়। এ প্রসঙ্গে উল্টো বর্ণমালা ভুলিয়ে আসলটা শেখানোর গল্পের অবতারণা করেন তিনি।
লিনু হক খালাঃ
সুপ্রিয় লিনু হক খালা রবি ঠাকুরের কথা দিয়ে শুরু করেন তার জীবনদর্শন, লেখালেখি, মুক্তিসংগ্রামের কথা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রথম রিডস দেখার পরের সপ্তাহে যুক্ত হন এর সাথে।
জানান মতিউরের মিছিলে প্রাণ দেয়ায় ৬৯ সালে তিনি খুব ব্যথিত হন। সমতার সমাজ, সুশিক্ষিত সুনাগরিক চাইলেও বাংলাকে প্রতিষ্ঠিত করা হয়নি এখনো, ফেব্রুয়ারি মাসেও চিরকুটগুলো ইংরেজিতে লেখা হয় ভেবে দুঃখ প্রকাশ করেন। আরও বলেন, অনেক বীরের সন্তানও তার পিতার গল্প জানেন না, হয়তো জানানো হয় না।
আগে মুক্তিযুদ্ধকে গণযুদ্ধ ভাবলেও বাংলাদেশের ৫০ বছরে এসে প্রথম বই প্রকাশ করতে অনুপ্রাণিত হন সঠিক তথ্য প্রদানের জন্য । স্বামীর চিঠি নিয়ে পত্রালাপ বই আকারে প্রকাশ করেছেন সেই সময়কে তুলে ধরতে।
মুক্তিযুদ্ধের মানচিত্রে বাংলার নারী তে স্থান পেয়েছে-২১ জন নারি মুক্তিযোদ্ধার পাশাপাশি সকল নারি মুক্তিযোদ্ধার সংগ্রাম, ত্যাগ আর সাহসিকতা।মাতৃভাষাকে গুরুত্ব দিতে পরামর্শ দেন তিনি।
মুস্তফা মুন্তাজঃ
নন্দিনী পাঠচক্রের অর্থ সম্পাদক মুস্তফা মুন্তাজ বাল্যকালে ঔষধের দোকানের সাইনবোর্ড থেকে তার ভিন্ন চিন্তার প্রকাশ দেখেন।
ছন্দ কাজ করতো ভিতরে, লিখে ফটোকপি করে রাখা, বিতরণ করা, নিজের লাইব্রেরি, বুকপকেটের অভিমান, বিভিন্ন ফরম্যাটে লেখালেখি ইত্যাদি আলাপ শেষে আবৃত্তি করেন স্বরচিত কবিতা ।
দর্শক পর্বঃ
জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ইত্যাদির আদলে বিশেষ ব্যবস্থায় ৫ জন দর্শক নিয়ে আয়োজন করা হয় ভিন্নধর্মী উপস্থিত পারফর্ম্যান্স । বিশেষ অতিথিবৃন্দ বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন, বেছে নেন সেরাদের সেরা দর্শক পারফর্মার।

কবি সালমান হাবিবঃ
মিলমেলার অন্যতম চমক সময়ের জনপ্রিয় কবি সালমান হাবিব তার রোজনামচা দিয়ে শুরু করেন। তুলে ধরেন কিভাবে কথা বলে মানুষের অনেক কাছে যাওয়া যায় । দর্শকদের অনুরোধে তিনি আবৃত্তি করেন স্বরচিত অনেকগুলো জননন্দিত কবিতাংশ।
নৃত্য পরিবেশন
রাফা, মাইশার নৃত্য পরিবেশন আয়োজনে যুক্ত করে নতুন মাত্রা।
আরও কিছু
আয়োজনের ফাঁকে ফাঁকে ঢাকার বাইরে থেকে আসা বিভিন্ন সদস্যের অনুভূতি প্রকাশসহ আরও ব্যতিক্রমী আয়োজন চলে পুরোটা সময়জুড়ে।
তবুও স্বপ্ন দেখি এবং মায়াচক্র বই দুটো উপহার দিয়ে আলোচিত প্রতিভাবান লেখক রাইয়ান জহির সমাপনী বক্তব্যে তুলে ধরেন নানামুখী প্রসঙ্গ। বাংলাদেশ রিডস এর অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে তুলে ধরেন চমকপ্রদ অনেক কিছুই।

যা কিছু নজর কেড়েছেঃ
- প্রায় সবকিছুতেই বইয়ের উপস্থিতি ছিল।
- অপ্রত্যাশিতভাবে তেমন বড় চাঁদা না নিলেও দুপুরের খাবার পরিবেশন। দুপুরের খাবারের চাইতে সেখানকার আড্ডাটা অনেক বেশি উপভোগ্য ছিল।
যা কিছু প্রত্যাশা ছিলঃ
- বাংলাদেশ রিডস এর পুরো আয়োজন মিস করেছে কাব্যদাদাকে।
- সময়কে আর একটু ম্যানেজ করা যেতে পরেতো।